বাংলাদেশ
শ্রম
আইনের
ইতিহাস
বাংলাদেশের শ্রম আইন (Labour Law) মূলত
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামল থেকে বিকাশ লাভ
করেছে এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান
ও স্বাধীন বাংলাদেশে সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয়েছে।
শ্রম আইন দেশের শ্রমিকদের
অধিকার সংরক্ষণ, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং শিল্প সম্পর্ক
সুসংহত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
🔹 ব্রিটিশ
শাসনামল
(১৯২৩-১৯৪৭)
বাংলাদেশের শ্রম আইন মূলত
ব্রিটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত বিভিন্ন আইনের উপর ভিত্তি করে
গড়ে উঠেছে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ
কিছু শ্রম আইন প্রণীত
হয়, যেমন:
✅ Factories Act, 1881 & 1934 – কল-কারখানায়
কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা ও
স্বাস্থ্য বিধান নিশ্চিত করা।
✅ Trade Union Act, 1926 – শ্রমিকদের
সংগঠন গঠনের অধিকার প্রদান করা।
✅ Workmen’s Compensation Act, 1923 – কর্মস্থলে দুর্ঘটনার
শিকার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
🔹 পাকিস্তান
শাসনামল
(১৯৪৭-১৯৭১)
পাকিস্তান আমলে ব্রিটিশ আইনের
উপর ভিত্তি করে নতুন কিছু
শ্রম আইন যুক্ত হয়
এবং সংশোধন করা হয়। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
✅ The Industrial Relations Ordinance (IRO), 1969 – শ্রমিকদের অধিকার ও শিল্প সম্পর্ক
উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
আইন।
✅ Shops and Establishment Act, 1965 – দোকান ও
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা।
🔹 স্বাধীন
বাংলাদেশের
শ্রম আইন (১৯৭১-বর্তমান)
(১)
১৯৭১-২০০৬: বিচ্ছিন্ন শ্রম আইনসমূহ
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার
পূর্ববর্তী আইনের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রমিক আইন সংশোধন ও
বাস্তবায়ন করে। তবে বিভিন্ন
সময় নতুন আইন প্রণয়ন
করলেও শ্রম আইন ছিল
বিচ্ছিন্ন এবং একক কোনো
নীতিমালায় সংহত ছিল না।
(২)
বাংলাদেশ
শ্রম আইন, ২০০৬ (Bangladesh Labour Act,
2006)
২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার
৫০টিরও বেশি পৃথক শ্রম আইনকে একীভূত করে একটি সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়ন করে, যা বর্তমানে শ্রম আইন, ২০০৬ নামে পরিচিত।
এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
✅ শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ – শ্রমিকদের কর্মস্থলে ন্যায্য বেতন, নিরাপদ পরিবেশ ও সুবিধা নিশ্চিত
করা।
✅ শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার সম্পর্ক নির্ধারণ – শ্রমিক ও মালিকের অধিকার
ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা।
✅ শ্রমিক ইউনিয়ন ও ধর্মঘটের অধিকার – সংগঠন করার ও ন্যায্য
দাবির জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
করার সুযোগ দেওয়া।
✅ নারী ও শিশুশ্রম সংক্রান্ত বিধান – শিশু ও নারীদের
সুরক্ষা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ
নিশ্চিত করা।
✅ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা – কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নিশ্চিত করা।
✅ অবসরকালীন সুবিধা – প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা
প্রদান।
🔹 বাংলাদেশ
শ্রম আইন সংশোধন ও আধুনিকায়ন (২০১৩, ২০১৮)
বাংলাদেশ শ্রম আইন আরও
আধুনিকায়ন করার জন্য ২০১৩
ও ২০১৮ সালে সংস্কার
ও সংশোধন করা হয়।
✅ ২০১৩ সালের সংশোধনী:
- শ্রমিকদের সংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়।
- কারখানায় নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও কল্যাণ ফান্ড বাড়ানো হয়।
✅ ২০১৮ সালের সংশোধনী:
- পোশাক খাতে শ্রমিকদের সুরক্ষা আরও জোরদার করা হয়।
- শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়।
- নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।
🔹 শ্রম
আইন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের শ্রম আইন থাকলেও
এর বাস্তবায়ন এখনও কিছু চ্যালেঞ্জের
সম্মুখীন:
❌ অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন মেনে
চলে না।
❌ শ্রমিকদের বেতন ও সুবিধা
নিয়ে অসন্তোষ বিদ্যমান।
❌ শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে বাধা সৃষ্টি
করা হয়।
❌ কারখানাগুলোতে নিরাপত্তার অভাব (যেমন: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি,
২০১৩)।
🔹 উপসংহার
বাংলাদেশের শ্রম আইন বিভিন্ন
সময় পরিবর্তন ও পরিমার্জিত হয়েছে
শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত
করতে। ২০০৬ সালের শ্রম আইন এর ভিত্তি হলেও,
সময়ের সঙ্গে এর আরও উন্নয়ন
ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
0 Comments