কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন (Performance Evaluation) হল একটি
প্রক্রিয়া যার
মাধ্যমে একটি
প্রতিষ্ঠান বা
কর্মসংস্থান কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কর্মদক্ষতা, দক্ষতা,
এবং
কাজের
প্রতি
তাদের
অবদান
পরিমাপ
করে।
কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সাধারণত একটি
নির্দিষ্ট সময়
পর
পর
অনুষ্ঠিত হয়
এবং
এটি
প্রতিষ্ঠান এবং
কর্মীর
পারস্পরিক উন্নয়ন
নিশ্চিত করতে
সাহায্য করে।
কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের কয়েকটি
পদ্ধতি
নিম্নে
আলোচনা
করা
হলো:
1.
পারফরম্যান্স রিভিউ (Performance Reviews)
- বছরান্ত
বা নির্দিষ্ট সময়ের পর পর: এটি একটি নিয়মিত মূল্যায়ন পদ্ধতি যেখানে কর্মীর কাজের প্রতিফলন, অর্জিত লক্ষ্য এবং কমপ্লিট হওয়া প্রকল্পের উপর আলোচনা করা হয়।
- মূল্যায়ন
ফর্ম: এই ধরনের রিভিউয়ে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ফর্ম ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে কর্মীর দক্ষতা, কাজের গুণগত মান, পunctuality, অ্যাটিটিউড, এবং দলগত কাজ মূল্যায়ন করা হয়।
2.
এমব্লয়ি সেলফ-অ্যাসেসমেন্ট (Employee Self-Assessment)
- কর্মী নিজেই তার কর্মদক্ষতা
মূল্যায়ন করে। এটি তার নিজস্ব উন্নতির জন্য একটি আলোচনার সুযোগ তৈরি করে।
- কর্মীরা তাদের নিজের শক্তি, দুর্বলতা,
অর্জিত লক্ষ্য এবং শেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রতিফলিত করেন।
3.
360 ডিগ্রি ফিডব্যাক (360-Degree Feedback)
- এই পদ্ধতিতে
একজন কর্মীকে শুধু তার সুপারভাইজার বা ম্যানেজারের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয় না, বরং সহকর্মী, নিচু স্তরের কর্মী, বা যাদের সাথে সে কাজ করেছে তাদের মতামতও নেওয়া হয়।
- এটি পুরো প্রতিষ্ঠান
বা টিমের মধ্যে কার্যকরী যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
4.
কোয়ালিটেটিভ এবং কোয়ান্টিটেটিভ মাপদণ্ড
- কোয়ান্টিটেটিভ:
নির্দিষ্ট পরিমাণে কাজ করা, নির্দিষ্ট সময়সীমায় কাজ সম্পন্ন করা, বিক্রির লক্ষ্য পূরণ করা, উৎপাদন পরিমাণ ইত্যাদি।
- কোয়ালিটেটিভ:
কাজের গুণ, সৃজনশীলতা, সমস্যার সমাধান, গ্রাহক সেবা, সহযোগিতার মনোভাব ইত্যাদি।
5.
কর্মচারী লক্ষ্য নির্ধারণ (Employee Goal Setting)
- কর্মীকে তার কাজের জন্য নির্দিষ্ট
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে দেওয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হয়।
- SMART লক্ষ্য (Specific, Measurable, Achievable, Relevant,
Time-bound) পদ্ধতিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যা কর্মীর পরবর্তী উন্নতির পথ সুগম করে।
6.
নির্দিষ্ট দক্ষতা বা কাজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন (Competency-Based Evaluation)
- কর্মীর বিশেষ দক্ষতা যেমন যোগাযোগ, সিদ্ধান্তগ্রহণ,
নেতৃত্ব, কৌশলগত চিন্তাভাবনা, টিমওয়ার্ক ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়।
- এটি সাধারণত দক্ষতা ভিত্তিক মূল্যায়ন
যেখানে কর্মীর মানসিক শক্তি, কাজের দক্ষতা এবং কার্যকর নেতৃত্বের মানদণ্ড পরিমাপ করা হয়।
7.
মনিটরিং এবং ফলো-আপ
- কর্মদক্ষতা
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুধুমাত্র একটি একক মূল্যায়ন না হয়ে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া হতে পারে। কর্মীকে সময় সময় ফিডব্যাক দেওয়া হয় এবং তাদের উন্নতির জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
- প্রতি মূল্যায়নের
পর কর্মীকে তার উন্নতির জন্য স্পষ্ট পরামর্শ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
8.
বৈচিত্র্যপূর্ণ মূল্যায়ন পদ্ধতি (Balanced Scorecard)
- এটি একটি কৌশলগত ব্যবস্থাপনা
পদ্ধতি যা কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি চারটি প্রধান এলাকা বিবেচনা করে: আর্থিক, গ্রাহক, অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, এবং শেখা ও
বৃদ্ধি।
- কর্মীকে তার ব্যক্তিগত
এবং দলগত লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা প্রদান করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়।
9.
বহু পর্যায়ের মূল্যায়ন (Multirater Appraisal)
- এখানে কর্মীর পারফরম্যান্স
বিভিন্ন স্তরের ব্যবস্থাপক, সহকর্মী, এবং সাবঅর্ডিনেটদের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।
- এই মূল্যায়ন
পদ্ধতি আরও গভীর এবং সঠিক ফলাফল প্রদান করে, কারণ এটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মীর কর্মদক্ষতার বিশ্লেষণ করে।
10.
টীম/প্রকল্প ভিত্তিক মূল্যায়ন (Team or Project-Based Evaluation)
- এই পদ্ধতিতে
কর্মীকে টিম বা প্রকল্পের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। এটি মূল্যায়ন করে কর্মী দলগতভাবে কাজ কেমন করছে, প্রকল্পের জন্য তার অবদান কতটা ছিল, এবং তার সহযোগিতার মনোভাব কেমন ছিল।
11.
কর্মী সংলাপ (Employee Dialogue)
- এই পদ্ধতিতে
কর্মী এবং ম্যানেজারের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনা হয়, যেখানে কর্মী তার সমস্যা, চাহিদা, এবং উন্নতির ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করতে পারে।
উপসংহার:
কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা
কর্মী
এবং
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে
সুসম্পর্ক স্থাপন,
উন্নতি
এবং
উদ্দীপনা বৃদ্ধি
করতে
সাহায্য করে।
এটি
কর্মীদের উন্নতির জন্য
প্রেরণা জোগাতে
এবং
প্রতিষ্ঠানের জন্য
উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ
করতে
সহায়তা
করে।
0 Comments